দৌলতদিয়ার বেশ্যালয়ে হারানো শৈশব

0

দৌলতদিয়া-আরিচা/পাটুরিয়া ঘাট একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত। এটি বাংলাদেশের সর্বৃবহৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পতিতালয়।

এটি বাংলাদেশের রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার একটি বৃহৎ ইউনিয়ন যা রাজবাড়ি-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে “মুক্তি মহিলা সমিতি” নামে পতিতাদের একটি রেজিস্টার্ড সংগঠন রয়েছে যার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে মোট পতিতার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এখানে প্রায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ বাড়ীওয়ালী রয়েছে এই সব বাড়ীওয়ালীর আন্ডারে সর্বোনিন্ম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে পতিতা রয়েছে। এই সব বাড়ীওয়ালীর প্রতিদিনের সর্বনিন্ম আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

অবস্থাশালী বাড়ীওয়ালীদের আয় দিনে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। মদ, গাঁজা, হেরোইন থেকে শুরু করে সকল প্রকার মাদক ব্যবসা এখানে ওপেন-সিক্রেট। এই পতিতালয়ের প্রধান ক্লায়েন্ট হচ্ছে মটর শ্রমিকরা, ট্রাক /বাস ড্রাইভাররা চার -পাঁচ  ঘন্টার জ্যামে পড়লে হেলপারকে গাড়ীর স্টিয়ারিং-এ বসিয়ে দিয়ে পতিতালয়ে চলে আসেন। অন্যান্য ধরণের ক্লায়েন্টও এখানে কম নয়। [¹]

আমি ব্যাপারটা সম্বন্ধে জানি বেশ অনেকদিন ধরেই। বেশ খোঁজখবর নিয়েছি কয়েক জায়গায়। নানান যায়গা ঘেটে যা পেলাম টুকরো টাকরা তার সারমর্ম –

প্রতিদিন গড়ে তিন – চার হাজার পুরুষ অবৈধ যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে দৌলতদিয়ার এই পতিতালয়ে যায়। [²]

আমাদের সভ্য সমাজের বাচ্চারা যেখানে প্লে-স্টেশন, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, কম্পিউটারে ভিডিও গেমস, দামী মোবাইল ফোন, রুমে এয়ার কন্ডিশনিং ছাড়া চলতে পারে না, দামী হোটেলের ফাস্ট ফুড খাবার, দামী বিদেশী জুস, চকলেট ছাড়া থাকতে পারে না, সেখানে শরিফা নামের এক আশ্চর্য শক্ত কিশোরী বেড়ে উঠছে এই বেশ্যালয়ে যেখানে আনাচে কানাচে পড়ে থাকে ব্যবহৃত কনডম, ফেন্সিডিল আর মদের বোতল। দেয়ালে ছিটিয়ে থাকে আসক্ত মানুষের লোল, আর বাতাস ভারি হয়ে থাকে তাজা বীর্যের আর ঘামের গন্ধে।

মাত্র দুইশত টাকা থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে মনের শত অনিচ্ছাসত্বেও নারীর সর্বোচ্চ মূল্যবান সম্পদ সম্ভ্রম বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহজ সরল মেয়েদের ভাল কর্মসংস্থানের আশ্বাস অথবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে দালালরা এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করে। অসহায় নারীরা যখন বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছেন, তখন তাদের আর কিছু করার থাকে না।  প্রতিমাসে ওপর মহলে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় । শুধু তাই নয়, পতিতাপল্লীর ভেতরে প্রায় বিশটি নির্দিষ্ট মাদকের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে দেশী বাংলা মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক। মাদকাসক্ত হয়ে নাচগান করার জন্য রয়েছে উচ্চ শব্দযুক্ত গান শোনার যন্ত্র। পতিতাপল্লীকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের এক বিশাল সম্রাজ্য। [³]

আমরা যেখানে আরাম-আয়েশের বিলাসী জীবন কাটাচ্ছি, সেখানে শরিফারা বেড়ে উঠছে এক ভয়াবহ পরিবেশে, যেখানে অলিতে-গলিতে ওৎ পেতে বসে আছে যৌন লালসায় অন্ধ পুরুষেরা যারা এমনকি তীব্র যৌন ক্ষুধায় ৫-৬ বছরের বাচ্চাকেও ছাড়ছে নাহ। জোর করে ডেকে নিয়ে গায়ে হাত দিচ্ছে, মিটিয়ে নিচ্ছে তীব্র লালসা।

উপরের ভিডিওটি আমি দেখি “দ্যা গার্ডিয়ান” এর ফেইসবুক পেইজে। সেখান থেকেই প্রথম জানতে পারি ব্যাপারটা নিয়ে। পরবর্তীতে বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফার Lisa Wiltse এর ট্রাভেল গ্যালারি থেকে মোটামুটি ১১৫ টার মত ছবি পাই যেখানে তিনি দৌলতদিয়ার দৈনন্দিন জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন।

কিছু ছবি এখানে দেয়া হলো –

তারপরেও, এত প্রতিকূলতার মাঝেও এই শরিফারা থেমে নেই। তারা স্কুলে যেতে চায়, মানুষের মত মানুষ হতে চায়। হয়তোবা কখনো তারা পারে, কখনো পারে না।  কখনওবা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরোটা সময়ই কাটিয়ে দিতে হয় তাদের এই বেশ্যালয়ের কঠিন দেয়ালের অন্তরালে।

জানি না। কয়েকমাস স্কুলে ক্লাস করে বাইরের দুনিয়ায় উকি দিয়ে ঝিকিমিকি স্বপ্নের দিন বোনা শুরু করে দেয়া এই শরিফাকেই দুম করে তুলে নিয়ে জোর করে বিছানায় শোয়ানো হবে। ৯-১০ বছরের এই সাহসী, বুদ্ধিমতী কিশোরীর সাহসী অভিযানের আর স্বপ্ন দেখার সমাপ্তি ঘটবে আধবুড়ো কোন ট্রাক ড্রাইভারের ঘর্মাক্ত দশমনী শরীরের চাপে আর পুংদন্ডের রুক্ষ আগ্রাসনে।

যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস শরিফা।

[Source 1: Some Where in Blog]

[Source 2: Daniel Melbye’s Blog]

[Source 3: Bangladesh Bani]

** Special Thanks to Lisa Wiltse mam for the amazing photos and for your kind permission to use it in my blog. Also thanks to Daniel Melbye, awesome write up man ! **